Type Here to Get Search Results !

প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাসমূহের মধ্যে রংপুর বিভাগের জেলা নীলফামারী, গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট অধিকতর অবহেলিত ও অনুন্নত এলাকা জেলা হিসেবে পরিচিত। এসব জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে দেশের অন্যতম বড় নদী তিস্তা, ধরলা, ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা নদী। উল্লিখিত জেলাসমূহের মোট আয়তনের প্রায় ২০% ভূমি নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। চরাঞ্চলের জেলাগুলোর প্রায় ৫০% ভাগ ভৌগোলিক এলাকার বসবাসরত মানুষজন প্রতি বছরই বন্যা, নদীভাঙ্গন, খরা, মঙ্গা, শৈত্যপ্রবাহসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে থাকে। নদীভাঙ্গনের শিকার হয়ে হাজার হাজার পরিবার তাদের বসতভিটা, জমি-জমা, সহায়-সম্পদ হারিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতরভাবে জীবনযাপন করে থাকে।
নানা প্রেক্ষাপটে প্রকৃত উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে সুদীর্ঘ কাল ধরে এ অঞ্চলের জনগণ বঞ্চিত। শিল্প-কলকারখানা একেবারেই নেই বলা যায়, অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও তেমন একটা গড়ে উঠেনি। স্থানীয়ভাবে পণ্য বাজারজাতকরণের ব্যবস্থার সুযোগও এখানে অনেক কম। স্থানীয়ভাবে সারা বছর ধরে কর্মসংস্থানের সুযোগও নেই। কৃষি এখানকার মানুষের জীবিকার অন্যতম প্রধান উৎস। কিন্তু কৃষিতে সাময়িকভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকলেও শ্রমের মজুরী খুবই কম এবং এই শ্রমে নারীদের অংশগ্রহণ মজুরী খুবই সীমিত। এরপরও উপর্যুপরি প্রাকৃতিক দূর্যোগ বিশেষ করে বন্যা, নদীভাঙ্গন, খরা ও শৈত্যপ্রবাহের সাথে বসবাস করছে এখানকার জনগণ।
প্রায় প্রতি বছরই বন্যা এখানকার আর্থ-সামাজিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় আবার বন্যা কখনও কখনও পলিমাটি বয়ে আনে এবং জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, জমিতে অধিক বালি জমে এবং জমির উর্বরতা নষ্ট করে জমিকে অনাবাদি করে ফেলে। এতে উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদীভাঙ্গনের ফলে প্রতি বছরই হাজার-হাজার পরিবার ভুমিহীন, গৃহ ও সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়ছে। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে চৈত্র-বৈশাখ ও আশ্বিন-কার্তিক মাসের কিছু সময় ধরে এই অঞ্চলে সাময়িক খাদ্য সংকট (মঙ্গা) দেখা দেয়।
সামাজিকভাবে নারীদের অবস্থা খুবই করুণ। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও কাজের কোন স্বীকৃতি নেই। পুনঃউৎপাদনশীল (জবঢ়ৎড়ফঁপঃরাব) কাজের পাশাপাশি উৎপাদনশীল (চৎড়ফঁপঃরাব) কাজেও নারীদের অংশগ্রহণ একেবারেই কম নয়। কিন্তু ধর্মীয় গোড়াঁমী, কুসংস্কার ও প্রচলিত নানা সামাজিক রীতিনীতির ফলে নারীদের প্রতিভা বিকাশ এবং তাঁদেরকে চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্তি করার ক্ষেত্রে বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।
ফলে, নারী সমাজ নানা অবিচার ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সমাজ ও পরিবারের জন্য নারীর বিশাল অবদান সত্ত্বেও নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব পুরুষদের হাতেই সীমাবদ্ধ। স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়ে আসছে দরিদ্র নারী ও পুরুষ। ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, দূর্যোগ, বাজার ব্যবস্থাপনা, পশু সম্পদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দরিদ্র জনগণ বিশেষ করে নারীদের প্রবেশাধিকার এবং সেবা গ্রহণের সুযোগও খুবই সীমিত।
উপরোক্ত পরিস্থিতি ও সমস্যা চিহ্নিত করার পর কয়েকজন শিক্ষিত, সমাজমনোস্ক, সচেতন, উদ্দ্যোমী ও প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ যুবক পিছিয়ে পড়া এই নারী-পুরুষের উন্নয়নে সহযোগিতা করার মাধ্যমে জাতী, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে দরিদ্র, বঞ্চিত ও অবহেলিত নারী-পুরুষের ক্ষমতায়নের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ২০০৩ খ্রীষ্টাব্দে মার্চ মাসের ২৭ (সাতাশ) তারিখে প্রতিষ্ঠা করেন ‘উত্তরা ফাউন্ডেশন নামের এই বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ